ছবি ও ঘর আর্ট গ্যালারিতে মিহির কয়ালের আটচল্লিশটি ছবির একক প্রদর্শনী হয়ে গেলো। স্নাতকোত্তর পাঠক্রম শেষ করার পর এটি তার একাদশতম প্রদর্শনী। এই পথে তিনি এক নিরলস অবিরাম যাত্রী। এবারের প্রদর্শনীটির নাম চয়ন করা হয়েছে ‘যামিনী’ অর্থাৎ এই অনুষঙ্গে মনে আসে রাত্রি-অন্ধকার-ছায়া-কালো। হয়তো সেই কারণে ছবিতে কালো ও ঘন রঙের প্রাধান্য চোখে পড়ে।
মিহিরের ছবি অবয়বধর্মী, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা পটের সামনের জমি থেকে উত্থিত হয়েছে। এবং সবই প্রায় নারী অবয়ব যারা ভাষাহীন একমাত্রিক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, মুখের অনেকটা অংশই ছায়া ঢাকা। উল্লেখ করা যায় ‘ওয়েটিং’ ছবিটি। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা, পেছনে গাঢ় অন্ধকার ঘরের প্রেক্ষাপট, মুখে তার অন্ধকার ছায়া, চোখে উদ্বেগ।
আর একটি ছবিতে দেখা গেল দূরে কালো জলে ডুবন্ত এক মুখ, এপারে আলোর দেশে জলচর হংস-হংসীরা করুণা মিশ্রিত কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে রয়েছে, ছবিতে পরিস্ফুট তাদের বিষ্ময়। প্রকৃতির অনুষঙ্গ বোঝাতে শিল্পীর ছবিতে বারবার এসেছে ফুলপাতা, পাখি, হংসহংস, আবার অনেকক্ষেত্রে রঙের নানা টেক্সচারে ছবির অভিব্যক্তি এনেছেন। যেমন গভীর জলের ভেতরে মাছ তার শরীরের ওপরে আরো দুটি ছোট মাছ, যেনো একটি পরিবার জলের আশ্রয়ে লুকিয়ে রয়েছে, এই কাজটিতে শিল্পী আলো ও রঙের টেক্সচার ব্যবহারে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। গভীর জলে অতি সামান্য সূর্যালোক লালচে সোনালী রঙের ব্যবহারে দেখিয়েছেন, তেমনি ছবির সাদা অংশ বা আলো ছাড়ার কৌশলটি ছবিতে অন্যমাত্রা দিয়েছে।
একটু অন্যরকম ছবি ‘কম্পোজিশন’- ঘন রঙের বুনোটে ছড়ানো কিছু শরীর, কেউ আলাদাভাবে প্রকট নয়, ছবির পেছনের জমি সাদার জড়ানো রেখাজাল আলোর বিপ্রতীপে ঘনরঙ ছবিতে ভাস্কর্য সুলভ ঘনত্ব তৈরি করেছে।
কালো সাদা ছবিগুলি অন্যরকম। এসব ক্ষেত্রে ছবিতে অনেক বেশি সম্পূর্ণতা এসেছে কারণ কালো সাদার বিভাজন নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই ছবিগুলিতে আলো আর কালোর বিভাজনে জটিলতা নেই, ছবির সাদা অংশ এই ঘন কালো অংশগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রদর্শনীতে দেখা গেলো বেশিরভাগ ছবিতেই শিল্পী পারসপেকটিভ বা পরিপ্রেক্ষন তৈরির চেষ্টা করেননি। কেবল মঞ্চের পর্দার মতো তা নিরপেক্ষ থেকেছে, ফলে ছবির স্পেসের মধ্যে ঢোকার কোনো রাস্তা তৈরি হয়নি এবং রং অবয়ব আলোছায়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেবল ওপরিতলে বা সারফেসে থেকে গেছে।
শিল্পী নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে চলেছেন বোঝা যায় কারণ তিনি এই প্রদর্শনীতে অনেক ধরনের ছবি রেখেছেন। তার ছবিতে অগ্রজ অনেক শিল্পীর প্রভাব অতি সুস্পষ্ট। আশা করা যায় এই পরিশ্রমী শিল্পী অতি সত্তর তা কাটিয়ে উঠবেন। তার এই যাত্রাপথে আমাদের অনেক শুভেচ্ছা রইল।